উম্মতকে কি বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন মহানবী (সা:)

main-qimg-fc5e0bcfa06077e645c751bdcd193a5b.jpg

জাগো বাঙ্গালী ডেক্স:
মানুষ সীমিত সময়ের জন্য দুনিয়ায় বসবাস করছে। এই সময়ে তারা আসল গন্তব্যের কথা ভুলে যায়। পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদের চাকচিক্যে প্রতারিত হয় এবং আখিরাতের বিষয়ে অসচেতন হয়ে পড়ে। পার্থিব জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বিশদ বিবরণ এসেছে।
ইরশাদ এসেছে, ‘তোমরা জেনে রেখো, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২০)

অথচ মহান আল্লাহ পরকালের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন এবং পার্থিব জীবনের বাহ্যিক সাজসজ্জা সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদের প্রতারিত না করে এবং কোনো প্রতারক যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের প্রতারিত না করে।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৫)

আমর বিন আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং ভালো বিষয়ে আশা পোষণ করো।
আল্লাহর শপথ, আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করি না। বরং আমি ভয় করি, তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য আসবে যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের কাছে এসেছিল। তখন তোমরা সম্পদ উপার্জনে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে যেমনভাবে তারা করেছিল। তা তাদেরকে যেমনিভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরও তেমনিভাবে ধ্বংস করবে।
(বুখারি, হাদিস : ৪০১৫)

তাই পবিত্র কোরআনে এসব বাহ্যিক উপকরণের দিকে না তাকাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি তার দিকে আপনার দুচোখ প্রসারিত করবেন না, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য হিসেবে উপভোগের উপকরণ করে দিয়েছি, তা দিয়ে তাদের পরীক্ষা করার জন্য। তোমার রবের প্রদত্ত রিজিক উত্তম ও অধিক স্থায়ী।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৩১)

দুনিয়ার চাকচিক্যে প্রতারিত হয়ে যারা ঈমান হারাবে তারা জাহান্নামে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে। ‘জাহান্নামবাসী জান্নাতবাসীকে ডেকে বলবে, আমাদের কিছু পানি দাও, অথবা আল্লাহ তোমাদের জীবিকা হিসেবে যা দিয়েছে তা থেকে কিছু দাও।
তারা বলবে, আল্লাহ এ দুটি কাফিরদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন। যারা তাদের দ্বিনকে ক্রীড়া-কৌতুক হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং পার্থিব জীবন যাদের প্রতারিত করেছিল।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫০-৫১)

একটি দীর্ঘ হাদিসে দুনিয়ার ধন-সম্পদের ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর শঙ্কার কথা বর্ণিত হয়েছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসুল (সা.) মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমি আমার পর তোমাদের জন্য কেবল এই ভয় করি যে তোমাদের জন্য দুনিয়ার চাকচিক্য উন্মুক্ত করা হবে।’ অতঃপর তিনি আল্লাহর নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেন। প্রথমে একটির কথা উল্লেখ করেন। এরপর আরেকটির কথা উল্লেখ করেন। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল, কল্যাণ কি মন্দ নিয়ে আসে? তখন রাসুল (সা.) চুপ থাকেন। আমরা ভাবলাম, তাঁর ওপর ওহি অবতীর্ণ হচ্ছে। মানুষ এমনভাবে নীরব ছিল যেন তাদের মাথার ওপর পাখি রয়েছে। তারপর রাসুল (সা.) বলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? তা কি কল্যাণকর? এ কথা তিনি তিনবার বলেন। এরপর বলেন, কল্যাণ সব সময় কল্যাণ বয়ে আনে। আর বসন্তকালের উদ্ভিদ (পোকামাকড়) ধ্বংস অথবা ধ্বংসোন্মুখ করে ফেলে। তবে যে পশু ক্ষুধা নিবারণ করে সেই ঘাস খায়। তারপর রোদ পোহায়, মলমূত্র ত্যাগ করে এবং আবার ঘাস খায়। নিশ্চয়ই এই সম্পদ সবুজ শ্যামল সুস্বাদু। সেই মুসলিমের সম্পদ কতই না উত্তম, যা সে উত্তমভাবে উপার্জন করেছে এবং আল্লাহর পথে, এতিম, অসহায় ও মুসাফিরের জন্য খরচ করেছে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সম্পদ উপার্জন করে তার উপমা ওই আহারকারীর মতো যার ক্ষুধা মেটে না। তা কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৫২)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top